Biography

Author Picture

Manoranjan Bhattacharya

মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ নভেম্বর, জলপাইগুড়ি জেলার পার্শ্ববর্তী রংপুর জেলার নীলফামারিতে। পিতা বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য সেই সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের পড়াশোনা হিন্দু স্কুল ও প্রেসিডেন্সি কলেজে। কৃতী ছাত্র ছিলেন। অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এমএ ও পরবর্তীকালে বিএল পাশ করেন। অধ্যাপনা করেছেন কলকাতার রিপন কলেজে। ছাত্র বয়স থেকেই নানা পত্রপত্রিকায় কবিতা লিখেছেন। লিখেছেন গল্প, উপন্যাস, কবিতা আর প্রবন্ধ। লেখার মাধ্যম ছিল সাধুভাষা।

পিতা বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য প্রতিষ্ঠিত ‘রামধনু’ পত্রিকাকে অবলম্বন করে মূলত শিশুসাহিত্যে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রবেশ। কিশোরদের উপযোগী এই মাসিক পত্রিকাটি তাঁর হাতেই লালিত ও পালিত হয়েছিল প্রায় নয় বছর।

মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য সৃষ্টি করেছিলেন ছোটোদের গোয়েন্দা কাহিনি। তাঁর সৃষ্ট ‘হুকা-কাশি’ নামক এক গোয়েন্দা বাংলা শিশুসাহিত্যের সম্পদ। হুকা-কাশি জাপানি ডিটেকটিভ। ‘পদ্মরাগ’, ‘ঘোষ চৌধুরীর ঘড়ি’, ‘সোনার হরিণ’—তিনটি উপন্যাসই হুকা-কাশিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এছাড়াও পাঁচটি ছোটোগল্প লিখেছেন হুকা-কাশিকেন্দ্রিক। সব গল্পগুলিতে ভূতুড়ে ও রহস্যের আবরণ এনেছেন, অপ্রত্যাশিত চমক আনলেও খুনখারাপির অবতারণা করেননি।

গভীর নিষ্ঠাবান, দরদি আর উদারহৃদয় মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য খুব ভালো গল্প বলতে পারতেন। হাসির গল্পেও তিনি হাত দিয়েছিলেন। ‘নিখিল বঙ্গ জীবনী সঙ্ঘ’, ‘হিমাচলিয়ান আর্ট গ্যালারি’, ‘এপ্রিলস্য প্রথম দিবসে’ গল্পগুলিতে হাস্যরস, বৈচিত্র ও উৎকর্ষের স্বাদ পাওয়া যাবে। আর-এক ধরনের গল্প লিখেছেন, যার বিষয় সংগ্রহ করেছেন রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ থেকে ‘অথচ পরিবেশ ও পটভূমিকা হল বর্তমান সময়ের।’ যা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল “নূতন পুরাণ” নামে।

কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, অনুবাদ, প্রবন্ধ—যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সফল হয়েছেন। ‘ড্রাগনের দুঃস্বপ্ন’ গ্রন্থের উৎসর্গপত্রে হেমেন্দ্রকুমার রায় বলেছেন, ‘দেখা পেয়েছি দু’দিন, মনে রাখব চিরদিন।’ এমন সুন্দর কথা মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের ব্যক্তিত্বকেই চিনিয়ে দেয়। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।